শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪:০৫ অপরাহ্ন

সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

 আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা দিপা রানী দাস (২১)। কিছুদিন পূর্বে গর্ভাবস্থায় প্রসবকালীন জরুরি সেবা নিতে এসেছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয় দিপার। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেটা বাধ্য হয়েই পৌর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রয়োজন হয় সিজারিয়ান অপারেশনের। অগত্যা সেই ক্লিনিকেই সিজারিয়ান অপারেশন করেন তিনি। এতে মধ্যবিত্ত দিপার পরিবারের ২৫ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়।

শুধু দিপা দাসই নন, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় সেবা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষ জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের এটি যেন রোজকার চিত্র।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসক ও লোকবল সংকট ও প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি সংকট থাকায় বেশ কিছু সেবা রোগীদের দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এসব সংকটের বিষযে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।’

দিপার স্বামী সুরেন্দ্র দাস জানান, বাচ্চা প্রসবের তারিখ নিকটে হওয়াতে দিপাকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। সেখানে চিকিৎসককে দেখানোর পর বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রযোজন হয়। সেখানে এসব পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় অবশেষে পৌর শহরের একটি ক্লিনিকে এসব পরীক্ষা ও সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। এতে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয় আমাদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৪ জন চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমানে ১১ জন চিকিৎসক রয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর মধ্যে প্রসূতি সেবায় অতি গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি (সার্জন), জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেস্থেসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডেন্টিস্টসহ ল্যাবের কিছু যন্ত্র, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, রেডিওগ্রাফার, অপারেশন থিয়েটারের কিছু সরঞ্জাম সংকটের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পদ শূন্য থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সিজারিয়ান অপারেশনসহ বেশ কিছু সেবা রোগীদের দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া পরিছন্নকর্মী না থাকায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে চারজনকে নিয়োগ দিয়ে আপাতত চলছে এই কাজ।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, হাসপাতালে কয়েকজন সিনিয়র নার্স থাকায় কিছু প্রসূতি মা সেবা পেলেও সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই তাদের জেলার হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও হাত-পায়ে কিংবা বিভিন্ন আঘাতজনিত কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে এক্সরেসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না থাকায় অনেকটা নিরুপায় হয়েই জেলা সদর হাসপাতাল অথবা কোনো বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা করান স্থানীয়রা। এতে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হয় তাদের।

জুয়েল রানা নামের এক সেবাগ্রহীতা কালবেলাকে বলেন, বাচ্চার আঘাতজনিত চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছিলাম কিন্তু রেডিওগ্রাফির কোনো ব্যাবস্থা না থাকায় জেলা শহরে যেতে হবে।

রিজিয়া বেগম নামে আরেক সেবাগ্রহীতা বলেন, প্রসব জটিলতায় প্রায় সময় আমাদের জেলা শহরে রোগী নিয়ে যেতে হয়। যদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব সুবিধা থাকতো তবে অনেক টাকা বাঁচত এবং ভোগান্তি পোহাতে হতো না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ইকবাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতিকরণে প্রায় বছর খানেক আগে ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য জন্য আমরা আবেদন করছি। তারপর পদ সৃজনসহ সবকাজ শেষ হলে ৫০ শষ্যার সেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে ৩১ শয্যায় আমরা সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। আমাদের এখানে বেশকটি পদ শূন্য রয়েছে। কিছু সরঞ্জাম সংকটও রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। এগুলো অনুমোদন হলে খুব শিগগিরই সিজারিয়ানসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দিতে পারব বলে আশা করছি।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.